তার মনে একটুখানি জায়গা পাওয়া, দ্বিতীয় কথা

 ৩১ জুলাই ২০০৯, এর মাঝে বেশ কয়েকদিন কেটে গিয়েছে। প্রিয়ার সাথে কথা বলবার আর সুযোগ মেলেনি। চেষ্টা যে করিনি তা নয়। কিন্তু বউদি তাকে নিয়ে সময় বের করতে পারিনি। আর তাছাড়া, তাদেরকেও দোষারোপ করতে পারছিলাম না। গ্রামে একটা মেয়ে অন্য একজনের ফোন দিয়ে কথা বলবে সেটা খুব কঠিন বিষয় ছিল তখন। আর যদি কোন প্রতিবেশী কিংবা পরিচিত জনের সামনে যদি এ দৃশ্য ধরা পড়ে তবে আর রক্ষা নেই। আবারও মনে করিয়ে দিই, সময়টা ছিল ২০০৯ সাল। গ্রামাঞ্চলে সব জায়গায় তখনও মোবাইল পৌঁছায়নি। 

খুব চিন্তা হচ্ছিল আমার। হয়ত আগামী দু'এক দিনের মধ্যে বউদি বাবার বাড়ি থেকে শশুরবাড়ি ফিরে আসবে। যদি এর মধ্যে কথা বলবার সুযোগ না হয় তবে আর কবে সুযোগ হবে কেউ জানেনা। 

দুপুরে বউদি ফোন করে বলেছিল আজ বিকালে কথা বলবার সুযোগ হতে পারে। তুমি ফোনটা কাছে রেখো। বিকাল ৪ঃ১০ মিনিটে বউদি ফোন করল। আমার প্রিয়ার সাথে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কথা হল আমার। আজ খুব শান্ত ভাবে কথা বলছিল ও। গতবারের মত সেই উচ্চস্বর আর নেই। মনে হচ্ছিল আমি ওর অনেক দিনের চেনা। কুশল বিনিময় আর পড়াশোনার বিষয় নিয়ে কথা শেষ হবার পর প্রিয়াকে বললাম,

  • আমিঃ আচ্ছা আমার বিষয়ে কি ভাবলে?
  • প্রিয়াঃ দেখুন যেটা হয়না তা নিয়ে কথা বলা ঠিক না।
  • আমিঃ কেন হয়না?
  • প্রিয়াঃ সমবয়সীদের মাঝে সম্পর্ক কখনও হয়না।
  • আমিঃ কেন হয়না? আর কেনইবা তুমি এমন করছো? দেখ তোমার আর আমার মধ্যে প্রচুর মিল, এত মিলের মধ্যে কেন হবেনা?
  • প্রিয়াঃ প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন!
  • আমিঃ কি বুঝব? আমি কিছু বুঝতে চাইনা। আমার শুধু তোমাকে চায় ব্যাস (লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলে দিলাম)।
  • প্রিয়াঃ দেখুন আপনার পড়াশোনা শেষ করে জব পেতে এখনও প্রায় ৮/৯ বছর সময় লাগবে। ততদিনে তো আমার বিয়ে যাবে তখন আপনি কি করবেন?
  • আমিঃ তুমি চাইলে সব সম্ভব। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সম্ভব।
আজ ওর সাথে প্রায় ২০ মিনিট মত কথা হল। একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম যে, প্রিয়ার কণ্ঠস্বর অসম্ভব রকমের সুন্দর এবং ও অনেক চঞ্চল। এটাও বুঝতে পারলাম, ও আমাকে নিয়ে বেশ ভেবেছে যা ওর কথাগুলোতে পরোক্ষভাবে স্পষ্ট।

অপেক্ষার প্রহর শেষে ওর সাথে কথা বলতে পারা যতটা সুখের, তার চেয়েও বেশী কষ্টের ভাল থেকো বলে কথা শেষ করা। খুব মন খারাপ হয়ে যায়। বউদি হয়ত কাল পরশু ফিরে আসবে। আমাদের যোগাযোগের আর কোন মাধ্যম থাকবেনা। আবার উনি কবে বেড়াতে যাবে তখন হয়ত কথা হবে। 

জানিনা ততদিন আমি কিভাবে থাকব! বউদিকে বলেছি আমার মোবাইল নাম্বার টা ওকে দিয়ে আসতে। কিন্তু সে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাসার (দাদার) ফোন থেকে ফোন করতে পারবেনা। সে সাহস তার নেই।সে ভীষণ ভিতু, লাজুক আর অতি সাধারণ। 

আমি অপেক্ষা করব ওর জন্য। নিরবে ভালবেসে যাবো। একের পর এক স্বপ্ন দেখতে থাকবো। বছরের পর বছর কেটে গেলেও তাকেই চাইতে থাকব। সে আমার অংশ, ঈশ্বর নিশ্চয় তাকে আমার সাথে মিলাবে।

Comments

Popular posts from this blog

ফিরে আসা, তাকে ভাল লাগার কথা জানানো

দূর্গাপূজার নবমী, প্রিয়ার সাথে তৃতীয় কথা

প্রিয়ার সাথে প্রথম কথা, স্বপ্ন পূরণ

দাদার হঠাৎ বিয়ে, তাকে প্রথম দেখা